খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি সংবিধিবদ্ধ সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান৷ পরিকল্পিত নগরায়ন ও আধুনিক খুলনা গড়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ১৯৬১ সালের ২১ জানুয়ারি এই প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি৷ সূচনালগ্ন হতেই কেডিএ অর্ডিন্যান্স ১৯৬১ এর ক্ষমতাবলে প্রতিষ্ঠানটি নগর পরিকল্পনা, উন্নয়নে অংশগ্রহন এবং অপরিকল্পিত উন্নয়ন নিয়ন্ত্রনের উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে৷ নগর পরিকল্পনার পাশাপাশি আধুনিক ও পরিকল্পিত খুলনা শহর বিনির্মাণে কেডিএ’র রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। আবাসন সমস্যার সমাধান, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি, যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতরকরণ ইত্যাদি নাগরিক সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে কেডিএ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরিকল্পিত আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকার উন্নয়ন, সড়ক নির্মাণ, মার্কেট নির্মাণ, বাসটার্মিনাল নির্মাণ, কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, শিশুপার্ক নির্মাণ ইত্যাদি ৫০টির ও বেশি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প সাফল্যের সাথে বাস্তবায়ন করেছে। ফলে খুলনা মাস্টার প্ল্যান এলাকায় নগরায়নের নুতন ধারার সৃষ্টি হয়েছে।
পরিকল্পিত নগরায়নের মূলমন্ত্রকে ধারণ করে ১৯৬১ সনের ২১ জানুয়ারি “The Khulna Development Authority Ordinance 1961” বলে আজকের খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ৬৩তম বছরে সংস্থাটির রয়েছে অনেক অর্জন। এ অর্জনকে আরও বেগবান করতে বিগত ২৯ জুলাই, ২০১৮ তারিখ প্রনীত হয়েছে “খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৮” যা অনুসরণ করে বর্তমানে সংস্থাটি পরিচালিত হচ্ছে। উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্র অর্থাৎ মহাপরিকল্পনা প্রনয়নের মাধ্যমে ভূমির পরিকল্পিত ব্যবহার, নগরায়ন ও অপরিকল্পিত স্থাপনা নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে একটি রেগুলেটরী বডি হিসেবে সংস্থাটি কাজ করছে। চেয়ারম্যান মহোদয় এর নেতৃত্বাধীনে রয়েছে ২৩ সদস্যের একটি শক্তিশালী বোর্ড, ১০টি শাখা ও অনুমোদিত বিভিন্ন গ্রেডের ৪৮৬ জন ( ৪০ জন আউট সোর্সিংসহ) জনবল। বর্তমানে খুলনা বিভাগের ৩টি জেলা জুড়ে ১২টি উপজেলায় প্রায় ৮২৪.৭৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা কেডিএ এর অধীক্ষেত্র। যার উত্তরে নওয়াপাড়া, দক্ষিণে মংলা পোর্ট পৌরসভা,পূর্বে অভয়নগর, দিঘলিয়া, রূপসা ও পশ্চিমে ডুমুরিয়া উপজেলার কৈয়াবাজার পর্যন্ত। কেডিএ মূলত চারটি শাখার মাধ্যমে সরাসরি জনসাধারণকে সেবা প্রদান করে থাকে। শাখাগুলো হলোঃ পরিকল্পনা শাখা, অথরাইজড শাখা, বৈষয়িক শাখা এবং প্রকৌশল শাখা।
কেডিএ এযাবত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ৩৫২ একর জমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন করে ১০ টি আবাসিক এলাকায় প্রায় ৪০০০ এর অধিক বিভিন্ন আকারের প্লট জনসাধারণের মধ্যে বরাদ্দ প্রদান করেছে। যার মধ্যে রয়েছে
এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কেডিএ খুলনার বিভিন্ন অবস্থানে এযাবতকাল প্রায় ৪৭.৭৫ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্যের ১৫ টি সড়ক নির্মাণ করেছে। এছাড়া আরও ১৪ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্যের ৪ টি সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। কেডিএ কর্তৃক নির্মিত রাস্তাসমূহের মধ্যে রয়েছেঃ
কেডিএ প্রায় ৬০.৭৪ একর জমি উন্নয়নের মাধ্যমে বাণিজ্যিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অবস্থানে বাণিজ্যিক প্লট তৈরী করে জনসাধারণের মধ্যে বরাদ্দ প্রদান করেছে।যার মধ্যে কেডিএ এভিনিউ, মজিদ সরণী, এম এ বারী সড়ক, মুজগুন্নি প্রধান সড়ক, জলিল সরণী ও যশোর রোড পার্শ্বস্থ বাণিজ্যিক এলাকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শিরোমনিতে ৫৬৮ একর জমি উন্নয়ন করে একটি শিল্প এলাকা স্থাপন করা হয়েছে। বরাদ্দকৃত শিল্প প্লটে বিভিন্ন ধরণের শিল্প কল কারখানা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে জুটমিল, সল্ট রিফাইনারি, কংক্রিট পোল প্লান্ট, কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ, ব্যাটারী শিল্প, ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ উল্লেখযোগ্য। কেডিএ খুলনার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৬ টি মার্কেট নির্মাণ করে ১ হাজারের অধিক ষ্টল বরাদ্দের মাধমে ব্যবসা/বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। মার্কেটগুলোর মধ্যে অন্যতম তিনটি হলোঃ
এ ছাড়াও সোনাডাঙ্গা এলাকায় ৮.৫০ একর জমি উন্নয়ন করে একটি আধুনিক আন্তঃজেলা বাসটার্মিনাল নির্মাণ করেছে। খুলনা মহানগরীর জনসাধারনের নির্মল বিনোদনের জন্য মুজগুন্নি আবাসিক এলাকায় ৮.৫০ একর জায়গার উপর ২০০৭ সালে মুজগুন্নি পার্কটি গড়ে তোলা হয়েছে। অফিস ভবন চত্বরে এবং কেডিএ এ্যাপ্রোচ রোডে ২টি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণকরে কেডিএ নানাবিধ সামাজিক অনুষ্ঠানে জনগণকে ব্যবহারের সুযোগ প্রদান করেছে। ঢাকাস্থ নিকুঞ্জ এলাকায় কেডিএ কর্তৃক একটি নয়তলা লিয়াজো অফিস কাম বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া কেডিএ বেশ কিছু জনকল্যানমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। যার মধ্যে রুপসা নদীর তীরে বীরশ্রেষ্ট রুহুল আমীন এর সমাধি, শহীদ সাংবাদিকদের স্মরণে প্রেসক্লাবে স্মৃতিসৌধ, শিশুপার্ক ও মসজিদ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২০১০ সালে কেডিএ কর্তৃক খুলনার শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কেডিএ কলেজ প্রতিষ্ঠা করে পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রযুক্তি ভিত্তিক আধুনিক সরকারী সেবা ও দাপ্তরিক ব্যবস্থা বাস্তবায়নের আলোকে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চালু করেছে বিভিন্ন ধরনের অনলাইন সেবা। এর মধ্যে রয়েছেঃ
নিরবিচ্ছিন্ন অনলাইন পরিসেবা পরিচালনার জন্য কেডিএ’র রয়েছে নিজস্ব সার্ভার সিস্টেম। খুলনা অঞ্চলের আবাসন সমস্যার সমাধান ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার শিল্প-কলকারখানা বিকাশ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সহ নানাবিধ সেবা কার্যক্রমের জন্য কেডিএ নিবেদিত। বর্তমানে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প অনুমোদনের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে, এর মধ্যে ফুলবাড়ি রেল ক্রসিং এ অভারপাস ,বারাকপুর হতে চন্দনী মহল পর্যন্ত সিটি আউটার বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বেশ কিছু প্রকল্প পরিকল্পনাধীন রয়েছে। যার মধ্যে নওয়াপাড়া বাইপাস সড়ক নির্মাণ, রুপসা ও ভৈরব নদী তীরবর্তী রাস্তা নির্মাণ এবং ময়ূরী-২ ও নিরালা-২ আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন উল্লেখযোগ্য। খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ খুলনাকে একটি অত্যাধুনিক পরিকল্পিত নগরীতে রূপান্তরের অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌছাবার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।